ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার প্রায় আড়াই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি লাল চিনি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। আখের রস থেকে মিহি দানার এই লাল চিনি দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় কৃষকদের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “লাল চিনির জিআই স্বীকৃতি পাওয়া ফুলবাড়িয়ার মানুষের জন্য গৌরবের। এর মাধ্যমে উৎপাদন ও বিপণন আরও বিস্তৃত হবে।”
ফুলবাড়িয়ার পলাশতলী চালাপাড়ার কৃষক এনামুল হক বলেন, “এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন জিআই মর্যাদা পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।”
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামে লাল চিনি উৎপাদন শুরু হয়েছিল। সেই সময় ধনী পরিবারগুলো আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছে উপহার হিসেবে এই মিষ্টান্ন পাঠাতেন।
গত বছর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি দপ্তরের যৌথ সুপারিশে লাল চিনিকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমানে ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই, পলাশতলী, বিদ্যানন্দ, কৈয়ৈরচালা, বাকতা, কুশমাইল, কালাদহ, এনায়েতপুর, রাঙামাটিয়া, সন্তোষপুর ও চৌধারসহ বিভিন্ন গ্রামে লাল চিনি উৎপাদন হয়ে থাকে।
কৃষক দুলাল মিয়া জানান, “এখন আমরা লাল চিনির ভালো দাম পাচ্ছি। ফলে কৃষকরা আরও উৎসাহিত হচ্ছেন।”
প্রান্তিক কৃষকদের জন্য লাল চিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ নগদ অর্থকরী ফসল। এটি বাড়িতে কয়েক ধাপে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে এটি তৈরি করা হয়—‘ডিঙ্গি’ (বড় ট্রেতে) এবং ‘ডাং’ বা ‘দুপ’ (হাতে)।
রাধাকানাই গ্রামের কৃষক আরব আলী বলেন, “জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আখ চাষে আরও যত্নশীল হবো।”
ফুলবাড়িয়ার কৃষকদের প্রত্যাশা, জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে লাল চিনির বাজার আরও প্রসারিত হবে এবং এটি স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

