Priyohaluaghat প্রিয় হালুয়াঘাট
✍️ইলিয়াস সারোয়ার
একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের পর অর্ধ শতাব্দী পার হলেও আমরা গৌরবময় মুক্তিসংগ্রামের পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারিনি। উপরন্তু ইতিহাসে মিশ্রিত হয়েছে নানারকম ভেজাল ও জাল তথ্য ও তত্ত্ব। অবশ্য আমাদের প্রয়াসও থেমে নেই। অনেকেই ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিসংগ্রামের নায়কদের পরিচিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির যে সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিল একাত্তরে, তাতে অংশগ্রহণ করেছিল সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। বাঙালির ন্যায্য দাবি আদায়ে এদেশের আলেম সমাজও পিছিয়ে ছিলেন না। তারা যেমন অস্ত্র হাতে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের সময় জনমত গঠনেও বড় ভূমিকা পালন করেছেন। অথচ তাদের এ অবদানের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে অনেকটা অজানা।
হালুয়াঘাটের কারী মফিজ উদ্দীন (রহ.) ছিলেন সেই অজানা মুক্তিযোদ্ধাদেরই একজন। বীর মুক্তিযোদ্ধা কারী মফিজ উদ্দীন হালুয়াঘাট উপজেলাধীন নড়াইল ইউনিয়নের বটগাছিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। জাফর আলী ও রূপজানের ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩২ সালে। ৷ তিন ছেলে ও চার মেয়ের জনক তিনি।
ত্রিশালের নিগুড়কান্দার কারী জাকারিয়া রহ. এর কাছে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি ৷ এই প্রখ্যাত উস্তাযের মাদরাসা থেকেই তিনি কেরাতের সর্বোচ্চ পাঠ কেরাতে সাবয়া তথা
সাত কেরাত শেষ করে কারী তরিকুল্লাহ রহ. এর কাছ থেকে পাগড়ি ও সনদপত্র গ্রহণ করেন। দরিদ্রতার কারণে এরপর আর উচ্চশিক্ষা নেয়ার সুযোগ হয়নি তার।
সাত কেরাত শেষ করে কারী তরিকুল্লাহ রহ. এর কাছ থেকে পাগড়ি ও সনদপত্র গ্রহণ করেন। দরিদ্রতার কারণে এরপর আর উচ্চশিক্ষা নেয়ার সুযোগ হয়নি তার।
তিনি ৭ বছর মকতবের শিক্ষকতা করেন ফুলপুর কুলিরকান্দা মসজিদে। এরপর হালুয়াঘাটের কৈচাপুর মাইজপাড়া মসজিদে ইমামতি ও শিক্ষকতা করেন ১৩ বছর। এসময়ই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
প্রথমে ভারতের ডালু ক্যাম্পে ২৬ দিন ট্রেনিং নেন ভারতের সিং বাবাজি, হালুয়াঘাটের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবিরুল ইসলাম বেগ ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কাছে। তার কমান্ডার ছিলেন আলী হোসেন। ট্রেনিং শেষে দেশের জন্য জান বাজি রেখে রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করেন কাশিগঞ্জ, চিলাগাই ও দারাকপুরে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মুক্তিযোদ্ধা স্মারকে কারী মফিজ উদ্দিনের পিতার নামের বানানে ভুল থাকায় স্বাধীনতার ৪৫ বছরে ১ টাকাও ভাতা পাননি। আবার হয়নি কোনও ছেলেমেয়ের চাকরিও। ভাঙা একটি চালাঘরে দরিদ্রতার সাথে জীবন সংগ্রাম করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ইহলোক ত্যাগ করেন কারী মফিজ উদ্দীন (রহ.)।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর সনদপত্রের স্মারক নং মুবিম/সা/ময়মনসিংহ/১৪/৩৫৫২ ও পরিচয়পত্রের নম্বর ৬১১২৪৮১৫২৬২৩১।
দেশকে শুধু দিয়েই গেছেন এই ক্ষণজন্মা আলেম মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ চলাকালীন তাদের জন্মই হয়নি অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাও প্রচুর সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নেওয়ার কথা জানা গেছে দেশের প্রথম সারির মিডিয়া মারফত। কিন্তু তিনি দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করার পরও দেশের কাছ থেকে কিছুই নেননি তিনি। বঞ্চিত অবস্থায়ই পারি জমিয়েছেন পরপারে। দয়াময় তাঁকে উত্তম বিনিময় দিন।
লেখক পরিচিতি:
পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক, মারকাযুল খিদমাহ আল-ইসলামিয়্যাহ;
সম্পাদক, ময়মনসিংহ দর্পণ;
নির্বাহী সম্পাদক, একুশে জার্নাল।