Magspot Blogger Template

হালুয়াঘাটের প্রাচীন ঐতিহাসিক কাছার খাঁ দিঘি ও রাজবাড়ী

Priyohaluaghat প্রিয় হালুয়াঘাট 

প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক কাছার খাঁ দিঘি ও রাজবাড়ী 

ঐতিহাসিক প্রমাণ দৃষ্টে, ষোড়শ শতাব্দি পর্যন্ত হালুয়াঘাট অঞ্চল নিবিড় বন-জঙ্গলে অন্ধকারচ্ছন্ন ছিল। হালুয়াঘাটের গভীর অরণ্যাবৃত অঞ্চলে সর্বপ্রথম কোচ সম্প্রদায় বসতি স্থাপন করেন। কোচ জাতির পূর্বে অন্য কোনো সম্প্রদায় এতদাঞ্চলে বসবাস করেছে বলে আমাদের জানা নেই।
হালুয়াঘাট বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে বর্তমান কাছার খাঁ নামক স্থানে দর্শা নদীর দক্ষিণ কূল ঘেঁষে কোচ সম্প্রদায়ের একটি রাজবাড়ি ছিলো। সেই রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ এখানে সেখানে পড়ে থাকা স্মৃতিচিহ্ন আজো দেখা যায়। যদিও রাজবাড়ির সব কিছুই কালের করাল স্রোতে আজ বিলীয়মান।হালুয়াঘাট অঞ্চলে এই স্থানটি 'কাছার খাঁ রাজবাড়ি' নামে পরিচিত। মেঘালয়ের গারো পাহাড় থেকে বেয়ে আসা দর্শানদীর তিন দিক পরিবেষ্টিত চমৎকার একটি স্থান কাছার খাঁ। রাজাবাড়ির প্রকৃতিগত অবস্থান ও প্ররিবেশ সত্যিই আশ্চর্য দুর্ভেদ্য দূর্গরূপ ছিলো। বহুকাল আগে তা ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষের মুখে এখনও রাজবাড়ির নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। দীর্ঘকাল জনমানবহীন ছিলো এই এলাকা। কাছার খাঁর রাজবাড়ির তিনদিক ঘিরে প্রবাহিত স্রোতোবহা দর্শা নদী। আজ আর দর্শা নদীর সেই যৌবনের উম্মাদনা নেই; প্রকৃতির গণঅত্যাচারে বার্ধক্যের পদপ্রান্তে- জরাজীর্ণ। বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত এ নদী পথ ছিলো হালুয়াঘাটের চলাচল ও দ্রব্য আমদানি-রপ্তানির প্রধান জলপথ। এছাড়াও দুর্গম গারো পাহাড় থেকে নদীপথে আনা হতো বিভিন্ন বনজ সম্পদ যেমন গজারি, তারাই, বাঁশ প্রভৃতি।

কাছার খাঁ ছিলেন কামরূম কাছাড় রাজ্যের পলাতক কোচ নৃপতি বা নেতা। বিজিত কোচ নৃপতি কাছার খাঁ আপন গোত্রীয় লোক-লস্করসহ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন এই নিবিড় অরণ্য এলাকায়। সেই পলাতক কোচদের একটি দল আশ্রয় নিলো এই হালুয়াঘাট বনাঞ্চলে। হালুয়াঘাটের পশ্চিম দিকে ভেকিপাড়া, নৈয়ারীকুড়া ও নলুয়াসহ এই তিনটি গ্রামের মাঝে পাহাড়ী দর্শা নদীর তিনদিক ঘেরা বাঁকে এক বর্গ মাইল পরিমিত একটি উন্মুক্ত সমতলভূমি। এই শ্যামলাচ্ছিদত মনোরম স্থানটিতে পলাতক কোচরা প্রতিষ্ঠিত করলো তাদের রাজবাড়ি। কোচদের প্রধান ছিলেন কেশর রায় বা কারও মতে কাছার রায়। এই রাজবাড়ির তিনদিক থেকে ঘিরে পাহাড়ী দর্শানদী যেন দৈব্যশীষের পরিখা হয়ে বেষ্টন করে আছে। পরাপর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিবীড়  বুট-বড়ই, বনফুল, রাখালগোট প্রভৃতির ঝাড়-জঙ্গল। আর তার মাঝে নানা হিংস্র প্রাণি জঙ্গলে অবাধ বিচরণ। যার ফলে সে তীর ভূমিতে কোনোদিন কেউ পা রাখতে সাহস করবে না। এমনি গাছপালা ও ঝোপঝাড়ে পূর্ণ দুর্গম বিস্তীর্ণ নিবিড় স্থানে কামরূম-কাছাড় অঞ্চল থেকে আসা কোচরা স্থাপন করলো তাদের রাজবাড়ি। 

কাছার খাঁ দিঘির চারপাশে বর্তমানে গজারি এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ গাছসহ অন্যান্য গাছ লাগানো হয়েছে। যেন সবুজের বিশাল সমারোহ! দিঘির টলটলে সুন্দর জলরাশির মুগ্ধ করা দৃশ্য। এক অপরূপ সৌন্দর্য বিরাজ করে দিঘির চারপাশ জুড়ে এছাড়া বিভিন্ন বর্ণালী পাখির কুজন কাছার খাঁ-এর সৌন্দর্যকে করেছে আরো অধিক আকর্ষণীয়। বাড়ির পিছন থেকে দক্ষিণ দিকে দর্শা নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তর্ণ এলাকা জুড়ে সারি সারি শাল-গজারী বৃক্ষের
শ্রেণিবদ্ধ বিরাট জঙ্গল ছিলো। এর একেকটা গাছ বিশাল আকারের ছিলো। পরে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। তখনকার একটি 'চারাগাছ' দর্শা নদীর কূল ঘেঁষে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও উত্তর পশ্চিম দিকে বিশাল এলাকা জুড়ে এখনো ঝোঁপ-জঙ্গল রয়েছে। এককালে বিশাল বন-জঙ্গল ছিলো। জঙ্গলে বাঘসহ নানা প্রজাতি হিংস্র প্রাণীর অবাদ বিচরণ ছিলো। পার্শ্ববর্তী এলাকার গরু-ছাগল মাঝেমধ্যে বাঘে খেয়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কালক্রমে মানুষ জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদ শুরু করেন। ফলে জঙ্গলের অনেকাংশই এখন শস্যক্ষেতে পরিণত। রাজবাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ দিয়ে বরাবর চলে গেছে একটি প্রশস্ত রাস্তা। রাজবাড়ি ও বিশাল দিঘির কোল ঘেঁষে উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক দিয়ে কুলকুল নাদে বয়ে গেছে দর্শা নদীটি। দিঘির পূর্ব তীর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত দর্শা নদীর তীর পর্যন্ত প্রায় অর্ধ মাইল সুবিস্তীর্ণ সমতলভূমি। এর শেষ প্রান্তে নদীর তীর ঘেঁষে রাজার অশ্বশালা আর সিপাই-প্রহরীদের আস্তানা ছিল। অবশ্য এসব কিছুর চিহ্ন পর্যন্ত আজ আর নেই। শুধু রাজার বিশাল দিঘিটি বেঁচে আছে ক্লান্ত বিমর্ষ স্মৃতিচিহ্ন হয়ে। 

নোট: সূত্রাদি উল্লেখহীন লেখাটি সংক্ষিপ্তভাবে পোস্ট করা হয়েছে।

ছবি: সংগহ সাআদ মাহমুদ 
তথ্য ঃ- হালুয়াঘাট দর্পন

Priyo Haluaghat

প্রধান সম্পাদক: Saad Mahmud © ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। priyohaluaghat। ফোন- +৮৮০১৯৩৮১৮৭৬৭৯। ইমেইল- priyohaluaghat@gmail.com

আপনার ইতিবাচক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

নবীনতর পূর্বতন

ads

Magspot Blogger Template

ads

Magspot Blogger Template
Magspot Blogger Template

نموذج الاتصال